
শেখ শাহ জামান
মহিউদ্দিন আহমদ। যশোরের সাংবদিকতার অঙ্গনে একটি স্মরণীয় নাম, একটি ইতিহাস। তিনি ছিলেন যশোর থেকে প্রতাশিত দৈনিক পূরবী’র সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত ছিল ঠিকই কিন্তু তিনি বহুমুখি প্রতিভার অধিকারি ছিলেন। গত ২৫ জানুয়ারি ২০২২, মঙ্গলবার ছিল মরহুম মহিউদ্দিন আহমদের ১১তম মৃত্যু বার্ষিকী। এ উপলক্ষে দৈনিক পূরবী ভবনে এক আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক পূরবীর সাবেক বার্তা সম্পাদক ও সাপ্তাহিক বাংলালোক সম্পাদক একেএম গোলাম সরওয়ার,সাপ্তাহিক দিগন্তবাণী সম্পাদক ও পূরবীর সাবেক সহ–সম্পাদক মুহাঃ শাহ জামান,মহিউদ্দিন আহমদের জ্যোষ্ঠ কন্যা সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট সৈয়দা সাবিনা আহমদ মলি (সাঃ ডেপুটি এটর্নী জেনারেল) জ্যোষ্ঠপুত্র সৈয়দ মাহবুব জাহান আহমদ সোহেল,বাংলালোক সহযোগি সম্পাদক মীর্জা আক্কাস আলী, দিগন্তবাণী প্রতিনিধি সাংবাদিক মতিয়ার রহমান লিটন,দৈনিক বাংলাদেশ সমাচারের স্টাফ রিপোর্টার সাব্বির আহম্মেদ,বৈশাখী টিভির ক্যামেরা পারসন নাজমুল হোসেন মিলনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অনুরাগীরা উপস্থিত ছিলেন। মরহুমের জীবন–কর্ম নিয়ে আলোচনায় গোলাম সরওয়ার বলেন,পূরবী সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমদ ছিলেন অত্যন্ত যোগ্যতা সম্পন্ন একজন সম্পাদক ও যিনি সাহসীকতার সাথে সাংবাদিকতা করেছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন,একজন উচ্চ শিক্ষিত ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন্ সম্পাদক ছিলেন। দিগন্তবাণী সম্পাদক শাহ জামান বলেন,পূরবী সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমদএর একান্ত ¯েœহভাজন হিসেবে তার সহচার্যে থেকে আমি দেখেছি তিনি একজন শিক্ষিতি,অভিজ্ঞ ও যোগ্যতাসম্পন্ন সাংবাদিক ছিলেন,এতটুকুই নয় বরং তিনি ছিলেন নির্ভিক সাংবাদিক ও নীতি আদর্শে আপোষহীন। তার সাংবাদিকতা ছিল পরিচ্ছন । যে কারনে তাকে ইউসিস কর্তৃক মাস্টার্স অব জার্নানি লজম সম্মাননা দেওয়া হয়। তিনি কখনো
অর্থবৃত্ত বা লোভ লালসা,লেজুড়বৃত্তি মাথায় নিয়ে সাংবাদিকতা করেন নি। দৈনিক পূরবী ছিল তার আবেগের প্রিয় পত্রিকা । তিনি পূরবীকে খুব ভালো বাসতেন। এটা ছিল তার প্রতিবাদের কন্ঠস্বর। তিনি ঢাকায় জাতীয় পত্রিকায় ভালো বেতনে সম্পাদক হিসেকে চা৩করীর অদএফাফোর পেয়েও তা গ্রহন করেন নি। বলতেন শাহ জামান শোন,ঢাকার পত্রিকায় গেলে আমি হয়তো ভালো বেতন বা অর্থ আয় করতে পারেবো কিন্তু আমার স্বাধীন সাংবাদিকতা ও বস্তুনিষ্ঠতা পরাধীনতার শিকলে বাঁধা থাকবে। অন্যদিকে আমি দেখেছি তিনি শুধু সাংবাদিকতায় নয়,ঢাকায় ছাত্র রাজনীতিতেও তদানিন্তন পাকিস্তানী শাষকদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাজপথে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন,এজন্যে তিনি কারাবরনও করেছেন। আবার এক সময় (এলাকায়) শিক্ষকতা করে অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে ছাত্র–শিক্ষক সবার কাছে প্রশাংসা পেয়েছেন। সামাজিক অঙ্গনে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সাথে অল্প সময়ে আপন করে নিতে তার ছিল ব্যাতিক্রম যোগ্যতা। ধার্মীকতায়ও তার অগ্রনী ভূমিকা ছিল। লিচু বাগান পুরাতন ঢাকা রোড সংলঘœ মসজিদের সভাপতি ছিলেন দীর্ঘ দিন। তাই আমার কাছে মনে হয়েছে মহিউদ্দিন আহমদ মানেই বহুমুখি প্রতিভার অধিকারি এক উজ্জল নক্ষত্র। আর সে নক্ষত্রের পতন ঘটেছে ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি। সৈয়দা সাবিনা আহমদ মলি ভার্চুয়াল অংশ গ্রহন করে তার বক্তব্যে বলেন, আমার বাবা মহিউদ্দিন আহমদের সাংবাদিকতা ছিল সমাজের কল্যানে,তাইতো তিনি পূরবীকে সবার জন্যে বিলিয়ে দিয়েছেন। পূরবী ছিল অনেক সাংবাদিকের প্রশিক্ষনের প্রতিষ্ঠান। তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদের সাংবাদিকতার প্রশিক্ষন দিয়েছেন। পরিশেষে মহান আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে আমাদের প্রার্থনা তিনি আমাদের প্রিয় ও পরম শ্রদ্ধেয় মরহুম মহিউদ্দিন আহমদের পৃথিবীর জীবনে কৃত গোনাহ বা ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন এবং তার ভালো কাজ ও নেক আমল গুলোকে নাজাতের ওয়াছিলা হিসেবে গ্রহন করে তাকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে গ্রহন করুন। আমিন।
মহিউদ্দিন আহমদ। যশোরের সাংবদিকতার অঙ্গনে একটি নাম একটি ইতিহাস। তিনি ছিলেন একটি প্রজ্জলিত নক্ষত্রসম। অনেক নবীন সাংবাদিকের সাংবাদিকতার প্রিয় শিক্ষক। । দৈনিক পূরবী সে সময় যশোরে তথা দক্ষিন–পশ্চিমাঞ্চলে অনেক প্রভাবশালী পত্রিকা। এর একটি কারন এ পত্রিকার সম্পাদক অত্যন্ত যোগ্যতা ও সাহসীকতার সাথে পত্রিকাটি সম্পাদনা করেছেন। তিনি ছিলেন অনেক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যাক্তিত্ব মানুষ ছিলেন। সে সময় যশোরের পত্রিকা গুলোর মধ্যে দৈনিক পূরবী প্রকাশিত হতো সম্পাদক মহিউদ্দিনের সম্পাদনায়,দৈনিক স্ফুলিঙ্গ প্রকাশিত হতো মিয়া আব্দুস সাত্তারের সম্পাদনায়,দৈনিক ঠিকানা আবুল হোসেন মীরের সম্পাদনায়, দৈনিক রানার আব্দুল মাজেদ এর মৃত্যুর পর তার ছেলে সাইফুল আলম মুকুলের সম্পাদনায়, দৈনিক কল্যান একরামুদ্দৌলার সম্পাদনায় আজো প্রকাশিত হচ্ছে। সে সময় যশোরে সাংবাদিকতায় মাহমুদুল হকের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক সত্যকথা নামে যে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছে তাতে দুর্দান্ত সাহসী সাংবাদিক মাহমুদুল হকের ক্ষুরধার লেখনি ক্ষমতাসীনদের ভীত নাড়িয়ে দিত। বড় কথা সে সময় সাংবাদিকতার অঙ্গনে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি ছিল না, নগ্ন বেহায়াপনা ছিল না,বানিজ্যিকসাংবাদিকতা ছিল না।
দৈনিক আমি সাংবাদিকতার জীবনে যতদিন যশোরে ছিলাম ততদিনই তার সংর্স্পশে ছিলাম। চলার পথে দেখতাম সমাজের সকল শ্রেনী ও পেশার মারুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছিল তার প্রতি। মহিউদ্দিন আহমদ ছিলেন সমাজের উচ্চ পর্যায় থেকে নিচ পর্যন্ত সকল সবতরে তার পদচারনা। এক সময় রাজনীতিতে বলিষ্ঠ ভুমিকা রেখেছেন। বঙ্গ বন্ধুর অনেক স্নেহভাজন ছিলেন বলে শুনেছি । তিনি এক সময় ছাত্র লীগের কেন্দ্রিয পযায়ের নেতা ছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনেও তার অনেক ভূমিকা ছিল। রাজনীতি করতে গিয়ে কারাবরন করেছেন। এক সময়ে শিক্ষকতাও করেছেন । তবে সাংবাদিকতায় র্দীঘ দিন তার কর্মবিস্তৃতি ছিল। তিনি বড়দের যেমন শ্রদ্ধা করতেন তেননি ছোটদের প্রতি ছিলেন স্নেহ পরায়ন। আমাকে অত্যান্ত স্নেহ করতেন। সন্তানের মতই ভালোবাসতেন বলে আমার মনে হতো। একবার ঢাকায় দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি ব্যারিষ্ট্রার মঈনুল হোসেনের সাথে বাসায় সাক্ষাতের সময় বললেন শাহ জামান তুমি আমার সাথে যাবে। সন্ধার পর আমরা যাবো নইলে রাগ করবে মঈনুল ভাই। আমাকে তিনি সবার কাছে আমার প্রয় ভাগ্নে বলেই পরিচয় করে দিতেন। একবার নড়াইল জেলা ও দায়রা জজ সাহেবের ( নাম বিস্মৃত) সাথে সাক্ষাতের সময় আমাকে প্রথমে ভাগ্নে বলে পরিচয় করে দিয়ে পরে বললেন সে খুবই একটিব সাংবাদিক। তাই ওকে আমার সঙ্গে রেখেছি। আমার পূরবীর ব্যস্ত সাংবাদিক শাহ জামান। ও খুব সাহসী। একবার আমি মক্কা মদিনা থেকে ফিরে এসে দেখা করলাম। মামা বললেন শাহ জামান তুমি আমাকে সাথে নিয়ে হজ্ব করতে গেলে খুশি হতাম। বললাম মামা আমি আপনাকে নিয়ে আবারো যাব ইনশাআল্লাহ। বললেন তোমার মামীও যেতে চায়।
আমার মনে পড়ে, ২০১০ সালে দিগন্ত বাণী পত্রিকার প্রথম সংখ্যার প্রকাশের সময় সম্পাদকীয় কেমন হবে তিনি আমাকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশের পর আমাকে মোবাইলে বললেন সম্পাদক শাহ জামান , পত্রিকা ভালো হচ্ছ্ েচালিয়ে যাও। আমি তোমার জন্য দোয়া করি। কিন্তু তার পরই ২০১১ সালের ২৮ জানুয়ারী হঠাৎ শুনতে হলো এক বিয়োগান্তিক সংবাদ। পূরবী সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমদ আর নেই। তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। যশোরের সাংবাদিকতার গগন থেকে একটি উজ্জল নক্ষত্রের যেন পতন হলো। আমার কাছে আজও মনে হয় আমার একজন বিশ্বস্ত অভিভাবককে হারানো কষ্ট আমি আজও ভুলতে পারিনি। তাই তার মৃত্যু দিবসে রুহের মাগফিরাত কামনা করি।