
স্টাফ রিপোর্টার:
দুর্নীতি এখন সবখানে। দুর্নীতি আমাদেও সমাজ দেহে রক্তের মত মিশে গেছে। দুর্নীতির কথা লিখলে সারা দিন রাত কেটে যাবে কিন্তু ফিরিস্তি শেষ হবেনা। আজকে বাজারের ব্যবসা-বানিজ্যে দুর্নীতির কিছু হালচাল তুলে ধরবো। এখন বাজারে দ্রব্যমুল্য কিনতে গিয়ে হরহামেশা মানুষ প্রতারনার শিকার হচ্ছেন। একদিকে নকল ভেজাল জিনিষ গচিয়ে দিয়ে বলা হয় একের মাল,একেবাওে জেনুইন অন্য দিকে প্রতারনা কওে দাম অতিরিক্ত হাতিয়ে নেয়া এযেন ব্যবসায়িদের চরিত্রের প্রধান অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। আপন-পর ভাবার সময় নেই। চক্ষু লজ্জা বা বিবেক যেন বলি দিয়ে ফেলেছে। চাল-ডাল-তেল-মসলাপাতি, প্রসাধনী দ্রব্য,ইলেক্ট্রনিক্স দ্রব্য,পোষাক,কাপড়-চোপড় মোট কথা নিত্য ভোগ্য পন্য কিনতে গিয়ে সাবখানে সবার কাছে (পরিচিত-বা অপিরিচিত ) সবখানে মানুষ প্রতারনার শিকার হচ্ছে। মানুষ বিশ^াসের জায়গা হারিয়ে ফেলেছে। পুত্র পিতার সাথে-পিতা পুত্রের সাথে প্রতারনা করতে দ্বিধাবোধ করছে না। নিত্য ভোগ্য পন্যের বেচা-কেনার ক্ষেত্রে কি চলছে তার হালচিত্র দৃষ্টিপাত করতে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রেতা একদিকে ভোজাল পন্য সরবরাহ করছে অন্য দিকে দাম হাতিয়ে নিচ্ছে বেশি। বাজারে পন্য কিনেতে গেলে এখন প্রতিদিন আমাদের শুনতে হচ্ছে দাম বেড়ে গিয়েছে। এমন কোন জিিেনষ নেই যে দাম বেড়ে গিয়েছে বলা হচ্ছে না। আবার ওজনে পারচুপি তো স্বভাবগত ব্যাপার অধিকাংশ ব্যবসায়ির। কোন পন্য এক কেজি কিনলে ওজনে কম হলেও দাম এক রকম, এক পোয়া বা এক’শ গ্রাম কিনলে অনেক বেশি রেটে নেয়া হচ্ছে। অথচ বিক্রেতা কিন্তু ডিজিটাল কাটায় মেপে দিয়েছে। পন্য একটুও বেশি যায়নি,তবুও দাম বেমি নেয়া হচ্ছে। সহজ সরল ক্রেতারা দোকানে মালামাল কয়েকটি আইটেম ক্রয় করে বিশ^াস রেখে দোকানিকে বলছেন মোট কত টাকা হলো? অসৎ দোকানদার সুযোগ বুঝে বাড়িয়ে বাড়িয়ে কেলকুলেটর টিপে বলে দিচ্ছেন.. এত টাকা..,এরপর বিশ^াসে টাকা বের করে দিয়ে বাড়ি এসে কোন কোন ক্রেতা হিসেব মিলাতে পারছেন না। এখানে সহজ সরল ক্রেতাকে ঠকিয়ে বাড়তি রেটে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। মসলা কিনতে গেলে এলাচ-জিরে-লবঙ্গ-ডালচিনি মোট মিলিয়ে যে পরিমান বিক্রেতাকে দেয়া হচ্ছে,হিসেব করে নেয়া হচ্ছে অনেক বেশি অথচ সরল বিশ^াসে ক্রেতা ঠকছে। ওজনে কম দেয়া যেন দোকানিদেও অধিকাংশের স্বভাবে পরিনত হয়েছে। ইলেক্ট্রনিকস পন্য কিনেতে গিয়ে চায়না ফর্মূলায় ঠকতে হচ্ছে। প্রত্যেকটি জিনিষ দুই রকম থেকে তিন/চার রকম পযর্ন্ত। বুঝে ওঠার উপায় নেই কোনটা আসল বা ভালো বা খারাপ। ক্রেতা বিভ্রান্ত হয়ে শুধু প্রশ্ন করেন কোনটা ভালো হবে? কিংবা এটা কি ভালো/ বিক্রেতা বুঝে না বুঝে বলে দিচ্ছেন এটা ভালো হবে। সুচতুর ক্রেতা কাস্টমারের সরলতাকে কাজে লাগিয়ে এবার ভালো বলে দাম হাতিয়ে নিচ্ছেন দেড়গুন বা দ্বিগুন পযর্ন্ত। অথচ বাড়ি নিয়ে গিয়ে দেখছেন দুই নম্বর জিনিষ। যেমন আপনি একটি বিদ্যুৎ বাল্ব কিনেছেন,বাড়ি নিয়ে একদিন বা এক ঘন্টা পরেও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে,দোকানির কাছে গিয়ে বললে বলবে ওরতো কোন গ্রান্টি বা ওয়ারেন্টি নেই। গ্রানটি ওয়ালা নেন তাতে ছয় মাস বা এক বছর। এরই মধ্যে খারাপ হলে দোকানির কাছে গেলেন, বলবে মালটা রেখে যান কোম্পানীর লোক আসলে তা ফেতর পাঠনো হবে। পরে দেখা যায়,ঘুরতে ঘুরতে কোম্পানীর লোক আর আসে না। ইদানিং যে কোন ইলেক্ট্রনিক জিনিষ কিনলে,মোবাইল,চার্জাও,কেলকুলেটর,মোট কথা ইলেক্ট্রনিক যে কোন সামগ্রীতে ওয়ারেনটি প্রতারনা চলছে বাজার জুড়ে। আর এর অনেকে নাম দিয়েছেন চায়না প্রতারনা। তৈরী চায়না কোম্পানির কিচ্ছু করার নেই,বা বলার নেই। আসন্ন রমজানে বাজার জুড়ে চলছে আরেক প্রতারনা বানিজ্য। ইফতারির অন্যতম পন্য খেজুর বেচা-কেনায় ঠকবাজি ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। দোকানে নানা রকম খেজুর, বিভিন্ন নাম দিয়ে দাম হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে চড়া রেটে। এর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে প্রচারিত মরিয়ম খেজুর নামে এক ধরনের খেজুর বেচাকেনা হচ্ছে। ক্রেতা বা গ্রাহকরা যাদের সমর্থ আছে তারা মরিয়ম খেজুর কিনছে হুকিয়ে। কেউ ৪০০ টাকা কেউ ৩০০ টাকা কেউই ৫০০ টাকাও বিক্রি করছে। এই মরিয়ম খেজুর নিয়ে চলছে জমজমাট প্রতারনা বানিজ্য। আসলে মরিয়ম খেজুর কি? কোথায় তার উৎপত্তি,তাই ইতিহাস কি? দেশে প্রতিদিন যে হাজার হাজার মন খেজুর বেচা-কেনা হচ্ছে,এত মরিয়ম খেজুর কোথা থেকে আসছে? মরিয়ম খেজুর পাগলের মতো সবাই যে যার মত বিক্রেতার লিকচার শুনে বিশ^াস করে কিনে নিচ্ছে। আবার কেউ বলছেন আসলে এ কোন মরিয়ম খেজুরই না। তাছাড়া মরিয়ম খেজুর কি? এর কোন ইতিহাস আছে কিনা, কেউ জানেই না। আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) এর মা মরিয়ম (আঃ) নামে খেজুর কিভাবে এলো? আর সঠিক কোন প্রমান আছে কিনা?বিশেষ কোন মহত্ব কোরআন-হাদিসে আছে কি না সে সম্পর্কে না জেনে হুজুগে মাতাল হয়ে কিনার কি মানে তা কিন্তু আমরা আদৌ খতিয়ে দেখছি নে। অথচ এক শ্রেনীর প্রতারক চক্র পবিত্র রমজান মাসে রোজাদার মোসলমানের সাথে এই প্রতারনা বানিজ্য করছে বলে বিশ^াস করছেন অনেকে। এতে ঠকছে সহজ সরল মানুষ। এর আগে আজুয়া খেজুরের নামে চড়া দামে জমজমাট ব্যবসা হয়েছে। মোট কথা ক্রেতা সাধারন যেন সবখানেই বলির পাঠা হচ্ছে। তাই একটু সচেতন হন,প্রতারক থেকে সাবধান হওয়াই বাঞ্চনীয়। (চলমান কলাম)